কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রাত্যহিক জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | - | NCTB BOOK
148
148

তোমরা সবাই জানো শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষ করে কলেজে যায়, কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায়। আমাদের দেশে অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করে শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আলাদা করে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। এক সময় এই ভর্তি পরীক্ষার কাজটি ছিল খুব কঠিন, শিক্ষার্থীদের অনেক দূর থেকে দেশের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে, ট্রেনে, জাহাজে যেতে হতো, লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তির ফর্ম আনতে হতো। সেই ফর্ম পূরণ করে আবার তাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো, ক্যাশ টাকা জমা দিতে হতো, ফর্ম জমা দিয়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হতো, সেই প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ হলে ফলাফল প্রকাশিত হতো-খবরের কাগজে সেই ফলাফল দেখে যারা সুযোগ পেত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো।

স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এখন প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা যায়

২০০৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করল তারা পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে শেষ করবে- এবং এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোথাও কোনো কাগজ ব্যবহার হবে না! ভর্তির রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো প্রার্থীকে তার ঘর থেকে বের হতে হবে না। ২০০৯ থেকে দেশের প্রায় সব স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময় এভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এখন সবাই নিজের ঘরে বসে শুধু স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ হয়ে গেল পানির মতো সহজ।

দলগত কাজ
তোমাদের স্কুলের অফিসকে কাগজবিহীন অফিসে রূপান্তর করতে হলে কী কী কাজ করতে হবে গুছিয়ে লেখো।

কাগজ ব্যবহার না করে অফিসের কাজকর্ম করার এই বিষয়টি আমাদের দেশে মাত্র শুরু হলেও ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। ১৯৭৫ সালে বিজনেস উইক নামের একটা ম্যাগাজিনে প্রথমবার এটি সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল কিন্তু তখন সেটি ছিল অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের মতো, কারণ এটি বাস্তবে রূপ দিতে হলে অফিসের সবার কাছে একটা কম্পিউটার থাকতে হবে- যেটি তখন কেউ চিন্তাও করতে পারত না।

বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদদের তৈরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে ভোট দেয়া ও ভোট গণনার কাজ করা যায়

এখন সেটি বাস্তবসম্মত হয়েছে। এখন অনেক অফিস পুরোপুরি কাগজবিহীন অফিসে পাল্টে গেছে। অফিসে কাগজে কিছু লিখতে হয় না- কম্পিউটারে লিখে একজন আরেকজনের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কম্পিউটারগুলো নেটওয়ার্ক দিয়ে একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয়ে আছে কাজেই চোখের পলকে সব কাজকর্ম হয়ে যায়। কাগজে কিছু লেখা হয় না বলে কাগজের খরচ বেঁচে যায়। কাগজ তৈরি হয় গাছ থেকে তাই যখন কাগজ বেঁচে যায় তখন গাছও বেঁচে যায়, পরিবেশটা থাকে অনেক সুন্দর। কাগজে লেখার কালি বা টোনার ব্যবহার হয় না বলে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পরিবেশও দূষণ হয় না।

যত দিন যাচ্ছে কম্পিউটারের মনিটরগুলো হচ্ছে বড়, তাই সেখানে কিছু একটা পড়ার কাজটিও হয়েছে অনেক সহজ। দেখা গেছে নতুন প্রজন্মের তরুণরা আজকাল কাগজে না লিখে কম্পিউটারে লিখতে পছন্দ করে, কাগজে না পড়ে মনিটরে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এক সময় ক্যামেরায় ছবি তুলে সেগুলো প্রিন্ট করতে হতো। আজকাল ক্যা মরায় তোলা ছবি প্রিন্ট না করেই মানুষ সরাসরি কম্পিউটারে বা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে নেয়।

আমাদের দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাগজবিহীন অফিসে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং গ্রাহকদের সাথে ব্যাংকের যোগাযোগ থেকে শুরু করে গ্রাহকের সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের এই পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হল অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার। এই সিস্টেমে গ্রাহকগণ তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে, তহবিল স্থানান্তর করতে এবং বাহ্যিক কাগজপত্রের প্রয়োজন ছাড়াই যে কোন বিল পরিশোধ করতে পারে। এই সিস্টেমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। অ্যাপের সাহায্যে গ্রাহকগণ তাদের স্মার্টফোন থেকেও সরাসরি লেনদেন করতে, ব্যালেন্স চেক করতে, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে এবং অন্যান্য সেবা গ্রহণ করতে পারে।

দলগত কাজ
তোমাদের ক্লাসে দুটি দল তৈরি করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করলে কী সুবিধা এবং কী অসুবিধা সেটি নিয়ে একটি বিতর্কের আয়োজন করো।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion